হলুদ রঙের শাড়ি

 হলুদ রঙের শাড়ি


তখন আমি অষ্টাদশী,তখন আমি শাড়ি।হ্যাঁ,অষ্টাদশী এক তরুণীর কাছে শাড়ি পরাটা বসন্তের একঝলক হাওয়া,কেমন সব কিছুই যেন ফুরফুরে,সদ্য ফোটা কুঁড়ির মত।


 কলেজে ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ি। সরস্বতী পুজোর দিনে বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখতে বেরিযেছি।হলুদ রঙের শাড়ি,ছোট্ট টিপ,ও হালকা লিপস্টিক।আয়নায় নিজের রুপ দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেছি "কি সুন্দর লাগছে আমায়!" পাড়ার অন্য একটি পুজো মণ্ডপে গেছি।সেখানে জমিয়ে আড্ডা চলছে।হঠাৎই আমার চোখ গেল একটি সুঠাম চেহারার যুবকের ওপর।নিজেকে কোনোমতে সামলে আড়চোখে দেখলাম ছেলেটি হলুদ রঙের পাঞ্জাবি ও সাদা রঙের পাজামা পরে বন্ধুদের সাথে গল্প করছে।প্রথম দেখাতেই ওকে আমার ভাল লাগল। দুজন দুজনের চোখাচোখি হতেই কেমন যেন শিহরণ জাগানো ভাললাগা শুরু হল। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ও এই পাড়াতে নতুন এসেছে। 


তারপর অনেকবারই পাড়াতে, খেলার মাঠে ওর সাথে দেখা

 হয়েছে, ধীরে ধীরে আলাপ, আর তারপর ভালোবাসা। একদিন ও আমায় ডেকে বললো, "তোমাকে সরস্বতী পুজোর দিনে হলুদ রাঙা  শাড়ী পরে বেশ লাগছিলো "।


আমি তো তখন খুশিতে হাবুডুবু খাচ্ছি। ইতস্তত হয়ে বললাম সেদিন তোমাকে ও খুব ভালো লাগছিলো। 


কিছুদিন পর আমরা ওখান থেকে চলে আসি, বাবার বদলির চাকরি ছিল তো তাই।তারপর আর ওর সাথে আমার কোন যোগাযোগ হয় নি।ইচ্ছে থাকলেও কোন উপায় ছিল না ।আমরা আসার দিনে ও আমাকে একটা উপহার দেবার পর হাত ধরে বলেছিল,"হলুদ রং টা তোমায় দারুন মানায়*


এখন আমি স্বামীর কর্মসূত্রে কলকাতা তে থাকি। আমার দুই ছেলে,মেয়ে বাইরে চাকরি করে। বিবাহিত জীবনে আমি অনেক সুখী। পুজোর সময় শাড়ি কিনতে গিয়ে আমার স্বামী একটি হলুদ রঙের সুন্দর শাড়ি নিয়ে আসে। শাড়ি টা সত্যি সত্যিই খুব সুন্দর

 কিন্ত শাড়ি টা আমি পরতে পারিনি।মনের কোণে লুকিয়ে থাকা সেই অষ্টাদশী যুবতীর প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা কোথাও যেন আমাকে আঁকড়ে ধরে ছিল


 প্রথম যৌবনের ভালোলাগার সেই মুহূর্ত,আমার ভেতরের আমি কে জাগিয়ে তুলেছিল। নিজের মন কে সান্তনা দিয়ে বললাম, 

তোমার ভালোবাসার প্রিয় হলুদ রংটাকে,তোমার মনে সযত্নে আগলে রেখো।


জানো,আমার স্বামীর দেওয়া বিশেষ উপহার  টা আমি অনেক যত্নে আগলে রেখেছি।


হলুদ রঙের শাড়ি যে আমার বড্ড প্রিয় ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উরো চিঠি 💌

চুসি পিঠে

মোচার ডালনা